Header Ads

Header ADS

১৩তম আসর, ০১ অধ্যায়, কুরআন তিলাওয়াতের আদব

কুরআন তিলাওয়াতের আদব 


সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার কুদরতের সামনে প্রতিটি বান্দা বিনীত হয়; যার মাহাত্ম্যের কাছে প্রতিটি রুকু-সিজদাকারী বিগলিত হয়; যার মুনাজাতের স্বাদ গ্রহণের জন্য তাহাজ্জুদগুযার জেগে থাকে এবং বিনিদ্র রজনী যাপন করে; যার নেকীর প্রত্যাশায় মুজাহিদ নিজের জীবন ব্যয় করে এবং প্রচেষ্টা চালায়। পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এমন কথা বলেন যা সৃষ্টিকুলের কথার সঙ্গে তুলনা থেকে উর্ধ্বে ও বহুদূরে; তাঁর কথার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাঁর নবীর ওপর অবতীর্ণকৃত কিতাব, যা আমরা দিনরাত পড়ি ও বারবার আওড়াই। বারবার পড়ায় তা পুরনো হয় না, বিরক্তি আসে না আর যাকে কখনও অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। আমি তাঁর প্রশংসা করি এমন ব্যক্তির ন্যায় যে তাঁর দুয়ারে অবস্থানের প্রত্যাশা করে কোনোরূপ বিতাড়নের শংকা ছাড়াই।


আর আমি সাক্ষ্য দেই যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই- ওই ব্যক্তির সাক্ষ্য যে আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠ এবং তাঁর অনুগত বান্দা। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, যিনি ইবাদতের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পাথেয় সংগ্রহ করেছেন।


আল্লাহ সালাত বর্ষণ করুন তাঁর ওপর; তাঁর সঙ্গী আবূ বকর সিদ্দীকের ওপর, যার শত্রুদের অন্তর অনিঃশেষ ক্ষতে পূর্ণ হয়েছে; ‘উমরের ওপর, যিনি অবিরাম ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন; উসমানের ওপর, যিনি নিঃশঙ্ক চিত্তে শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছেন; আলীর ওপর, যিনি আপন তলোয়ার দিয়ে বিরামহীন কাফেরদের ক্ষেত নিমূল করেছেন। আর রাসূলের সকল পরিবার-পরিজন ও সাহাবীর ওপর, অনন্তকালব্যাপী বিরামহীন। আর তিনি তাদের উপর যথাযথ সালামও পেশ করুন। 


আমার ভাইয়েরা! এই যে কুরআন, যা আপনাদের কাছে আছে, আপনারা তিলাওয়াত করছেন, শুনছেন, মুখস্থ করছেন এবং লিপিবদ্ধ করছেন, তা আপনাদের রব ও সৃষ্টিকুলের রব ও পূর্ববর্তী-পরবর্তীদের মা‘বুদের বাণী; এটা তাঁর সুদৃঢ় রশি, তাঁর সরল পথনির্দেশ, বরকতময় উপদেশবাণী ও সুস্পষ্ট নূর। মহান আল্লাহর সম্মান ও মাহাত্মের সাথে যেভাবে মানায় সেভাবে আল্লাহু তা‘আলা এ কুরআন দ্বারা বাস্তবিকই কথা বলেছেন। তিনি কুরআনকে নৈকট্যশীল সম্মানিত ফেরেশতাদের একজন জিব্রাইল আমীনের নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি এরপর এ কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওসাল্লামের হৃদয়ে নাযিল করেছেন। যাতে তিনি সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায় মানুষকে সতর্ককারীদের অন্তর্ভু্ক্ত হতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা বড় বড় বিশেষণে কুরআনকে বিশেষায়িত করেছেন যাতে আপনারা কুরআনের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান করতে পারেন। যেমন,


* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,


﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ﴾ [البقرة: ١٨٥]


‘রমযান মাস যাতে নাযিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত ও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)


﴿ ذَٰلِكَ نَتۡلُوهُ عَلَيۡكَ مِنَ ٱلۡأٓيَٰتِ وَٱلذِّكۡرِ ٱلۡحَكِيمِ ٥٨ ﴾ [ال عمران: ٥٨]


* ‘এটি আমরা আপনার উপর তিলাওয়াত করছি, আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৮)


﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَكُم بُرۡهَٰنٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ نُورٗا مُّبِينٗا ١٧٤﴾ [النساء: ١٧٤]


* ‘হে মানুষ! অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে দলীল এসেছে আর আমরা তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট নূর নাযিল করেছি।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ‌১৭৪)


﴿قَدۡ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٞ وَكِتَٰبٞ مُّبِينٞ ١٥ يَهۡدِي بِهِ ٱللَّهُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَهُۥ سُبُلَ ٱلسَّلَٰمِ ﴾ [المائ‍دة: ١٥، ١٦]


* ‘অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ হেদায়াত দান করবেন তথা শান্তির পথ জান্নাতের দিকে পথনির্দেশ করবেন- তাকে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১৫-১৬)


﴿وَمَا كَانَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ أَن يُفۡتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا رَيۡبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٣٧ ﴾ [يونس: ٣٧]


* আর এ কুরআন আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়ন এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৭)


﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [يونس: ٥٧]


* ‘হে মানবকুল! তোমাদের নিকট উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময় ও হেদায়াত ও রহমত মুমিনদের জন্য।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭)


﴿الٓرۚ كِتَٰبٌ أُحۡكِمَتۡ ءَايَٰتُهُۥ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِن لَّدُنۡ حَكِيمٍ خَبِيرٍ ١﴾ [هود: ١]


* ‘আলিফ লাম রা, এটা এমন কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্টিত, প্রাজ্ঞ ও সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।’ (সূরা হূদ, আয়াত: ১)


﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]


* ‘নিশ্চয় আমি উপদেশবাণী তথা কুরআন নাযিল করেছি এবং নিঃসন্দেহে এর হেফাজতের দায়িত্বভার আমি নিজেই নিয়ে নিলাম।’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯)


﴿ وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ سَبۡعٗا مِّنَ ٱلۡمَثَانِي وَٱلۡقُرۡءَانَ ٱلۡعَظِيمَ ٨٧ لَا تَمُدَّنَّ عَيۡنَيۡكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعۡنَا بِهِۦٓ أَزۡوَٰجٗا مِّنۡهُمۡ وَلَا تَحۡزَنۡ عَلَيۡهِمۡ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِلۡمُؤۡمِنِينَ ٨٨﴾ [الحجر: ٨٧، ٨٨] 


* ‘আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কুরআন দান করেছি। আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর দিকে দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্য দিয়েছি। তাদের জন্য পেরেশান হবেন না। আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন।’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৮৭-৮৮)


﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]


* ‘আমরা আপনার নিকট কিতাবটি নাযিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত:৮৯) 


﴿إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَبِيرٗا ٩ وَأَنَّ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٠ ﴾ [الاسراء: ٩، ١٠]


* ‘নিশ্চয় এ কুরআন যেটা যথার্থ ও সঠিক সে দিকেই পথনির্দেশ করে এবং ঈমানদারদের সুসংবাদ প্রদান করে, যারা নেক কাজ করে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।’ (সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯-১০)


﴿ وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٞ وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارٗا ٨٢ ﴾ [الاسراء: ٨٢]


* আর আমরা নাযিল করি এমন কুরআন যা রোগের নিরাময় এবং মু’মিনদের জন্য রহমতস্বরূপ। আর এটা জালিমদেরকে ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করে না।’ (সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮২)


﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]


* আপনি বলে দিন! যদি মানব ও জ্বিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআন অনুরূপ কিছু আনয়ন করবে- তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছুই আনয়ন করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হোক।’ (সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮)


﴿مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ ٢ إِلَّا تَذۡكِرَةٗ لِّمَن يَخۡشَىٰ ٣ تَنزِيلٗا مِّمَّنۡ خَلَقَ ٱلۡأَرۡضَ وَٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلۡعُلَى ٤ ﴾ [طه: ٢، ٤]


* ‘আমরা আপনার ওপর কুরআনকে এ জন্য নাযিল করিনি যে, আপনি দুঃখ-কষ্ট করবেন। অবশ্য এটা উপদেশবাণী স্বরূপ যে আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য এটা নাযিল হয়েছে। সুউচ্চ আকাশ ও যমীনকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এমন সত্তার পক্ষ থেকে।’ (সূরা ত-হা, আয়াত: ২-৪)


﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١ ﴾ [الفرقان: ١]


* ‘বরকতময় সেই সত্তা যিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী কুরআন তাঁর বান্দাহর প্রতি নাযিল করেছেন; যাতে তিনি বা তা সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারী হয়।’ (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ১)


﴿ وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٩٢ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤ بِلِسَانٍ عَرَبِيّٖ مُّبِينٖ ١٩٥ وَإِنَّهُۥ لَفِي زُبُرِ ٱلۡأَوَّلِينَ ١٩٦ أَوَ لَمۡ يَكُن لَّهُمۡ ءَايَةً أَن يَعۡلَمَهُۥ عُلَمَٰٓؤُاْ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ١٩٧ ﴾ [الشعراء: ١٩٢، ١٩٧]


* ‘নিশ্চয়ই এ কুরআন তো সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেস্তা (জিব্রাঈল) একে নিয়ে অবতরণ করেছে, আপনার অন্তরে যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শন কারীদের অন্যতম হোন, সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয়-ই এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাইলের আলেমগণ এটা অবগত আছেন।’ (সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৯২-১৯৭)


﴿وَمَا تَنَزَّلَتۡ بِهِ ٱلشَّيَٰطِينُ ٢١٠ وَمَا يَنۢبَغِي لَهُمۡ وَمَا يَسۡتَطِيعُونَ ٢١١ ﴾ [الشعراء: ٢١٠، ٢١١]


* ‘আর শয়তানরা এ কুরআন নিয়ে অবতরণ করে না। আর তাদের জন্য উচিতও নয় এবং তারা পারবেও না।’ (সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১০-১১)


﴿ بَلۡ هُوَ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ فِي صُدُورِ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَۚ﴾ [العنكبوت: ٤٩]


* ‘বরং এ কুরআন কতিপয় নিদর্শন ও যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে এদের হৃদয়ে কতিপয় সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা।’ (সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৭) 


﴿إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرٞ وَقُرۡءَانٞ مُّبِينٞ ٦٩ لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيّٗا وَيَحِقَّ ٱلۡقَوۡلُ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧٠ ﴾ [يس: ٦٩، ٧٠]


* ‘এটা তো কেবল এক উপদেশবাণী ও প্রকাশ্য কুরআন। যাতে তিনি সতর্ক করতে পারেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।’ (সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৬৯-৭০)


﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩ ﴾ [ص: ٢٩]


* ‘আমরা আপনার নিকট অবতীর্ণ করেছি এক বরকতপূর্ণ কিতাব; যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করতে পারে, আর জ্ঞানীরা যেন উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ (সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৯)


﴿ قُلۡ هُوَ نَبَؤٌاْ عَظِيمٌ ٦٧ ﴾ [ص: ٦٧]


* ‘আপনি বলে দিন! এটা তথা এ কুরআন এক মহা সংবাদ।’ (সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৭)


﴿ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحۡسَنَ ٱلۡحَدِيثِ كِتَٰبٗا مُّتَشَٰبِهٗا مَّثَانِيَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمۡ وَقُلُوبُهُمۡ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَهۡدِي بِهِۦ مَن يَشَآءُۚ﴾ [الزمر: ٢٣]


* ‘আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কুরআন নাযিল করেছেন। যা সামঞ্জস্যপূর্ণ বারবার পঠিত গ্রন্থ। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার ওপর, যারা তাদের রবকে ভয় করে, এরপর এদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন।’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২৩)


﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِٱلذِّكۡرِ لَمَّا جَآءَهُمۡۖ وَإِنَّهُۥ لَكِتَٰبٌ عَزِيزٞ ٤١ لَّا يَأۡتِيهِ ٱلۡبَٰطِلُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَلَا مِنۡ خَلۡفِهِۦۖ تَنزِيلٞ مِّنۡ حَكِيمٍ حَمِيدٖ ٤٢ ﴾ [فصلت: ٤١، ٤٢]


* ‘নিশ্চয়ই কুরআন তাদের নিকট আগমন করার পর যারা তা অস্বীকার করে। (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে)। এটা অবশ্যই মহিমাময় গ্রন্থ।’ বাতিল তার সামনে বা পিছনে দিয়ে আসতে পারে না, এটা তো প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।’ (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১-৪২)


﴿وَكَذَٰلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ رُوحٗا مِّنۡ أَمۡرِنَاۚ مَا كُنتَ تَدۡرِي مَا ٱلۡكِتَٰبُ وَلَا ٱلۡإِيمَٰنُ وَلَٰكِن جَعَلۡنَٰهُ نُورٗا نَّهۡدِي بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَاۚ ﴾ [الشورى: ٥٢]


“এমনিভাবে আমরা আপনার নিকট রুহ প্রেরণ করেছি আমাদের আদেশক্রমে। আপনি জানতেন না কিতাব কি এবং ঈমান কী? কিন্তু আমরা একে করেছি নূর। যার দ্বারা আমরা আমার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করি।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৫২)


﴿ وَإِنَّهُۥ فِيٓ أُمِّ ٱلۡكِتَٰبِ لَدَيۡنَا لَعَلِيٌّ حَكِيمٌ ٤ ﴾ [الزخرف: ٤]


* ‘নিশ্চয় এ কুরআন আমাদের নিকটে সমুন্নত অটল অক্ষুণ্ন রয়েছে লওহে মাহফুযে।’ (সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৪)


﴿هَٰذَا بَصَٰٓئِرُ لِلنَّاسِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ﴾ [الجاثية: ٢٠]


* ‘এটা মানুষের জন্য সুস্পষ্ট দলীল, জ্ঞানবর্তিকা, হেদায়াত ও রহমত দৃঢ়বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে।’ (সূরা আল-জাসিয়াহ্‌, আয়াত: ২০)


﴿وَٱلۡقُرۡءَانِ ٱلۡمَجِيدِ ﴾ [ق: ١]


* ‘ক্বফ, মর্যাদাপূর্ণ কুরআনের কসম।’ (সূরা ক্বফ, আয়াত: ১)


﴿فَلَآ أُقۡسِمُ بِمَوَٰقِعِ ٱلنُّجُومِ ٧٥ وَإِنَّهُۥ لَقَسَمٞ لَّوۡ تَعۡلَمُونَ عَظِيمٌ ٧٦ إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ تَنزِيلٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ ﴾ [الواقعة: ٧٥، ٨٠]


* ‘অতএব আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি। নিশ্চয় এটা মহা শপথ যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক সংরক্ষিত গ্রন্থে তথা লওহে মাহফুযে। যারা পাক-পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। এটা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।’ (সূরা আল-ওয়াকি‘আ, আয়াত: ৭৫-৮০)


﴿لَوۡ أَنزَلۡنَا هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ عَلَىٰ جَبَلٖ لَّرَأَيۡتَهُۥ خَٰشِعٗا مُّتَصَدِّعٗا مِّنۡ خَشۡيَةِ ٱللَّهِۚ وَتِلۡكَ ٱلۡأَمۡثَٰلُ نَضۡرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ ﴾ [الحشر: ٢١]


* ‘যদি আমরা নাযিল করতাম এ কুরআনকে পাহাড়ের ওপর তাহলে অবশ্যই আপনি দেখতে পেতেন পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য উপস্থাপন করি; যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২১)


আল্লাহ তা‘আলা জ্বিন জাতির কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:


﴿ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ ﴾ [الجن: ١، ٢]


* ‘নিশ্চয় আমরা বিস্ময়কর এক কুরআন শুনেছি যা হেদায়াতের পথে পরিচালিত করে। সুতরাং আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম।’ (সূরা আল-জিন, আয়াত: ১-২)


﴿ بَلۡ هُوَ قُرۡءَانٞ مَّجِيدٞ ٢١ فِي لَوۡحٖ مَّحۡفُوظِۢ ٢٢ ﴾ [البروج: ٢١، ٢٢]


* ‘বরং এটা সম্মানিত কুরআন। যা লওহে মাহফুয বা সংরক্ষিত ফলকে রয়েছে।’ (সূরা আল-বুরূজ, আয়াত: ২১-২২)


এ সমস্ত মহান গুণাবলি যা কুরআনের ব্যাপারে উল্লেখ করলাম, আর যেসব গুণাবলি উল্লেখ করিনি, সবই এ কুরআনের মাহাত্ম্য, কুরআনকে সম্মান করার আবশ্যকতা, আদবের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা তিলাওয়াতের সময় উপহাস, ঠাট্টা-বিদ্রূপ থেকে বিরত থাকার ওপর স্পষ্ট দলীল বহন করে।





No comments

Powered by Blogger.