Header Ads

Header ADS

১৮। একমাত্র আল্লাহই হেদায়াতের মালিক

একমাত্র আল্লাহই হেদায়াতের মালিক 


১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,


إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ (ألقصص: 56)


‘‘আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে আপনি হেদায়াত করতে পারবেন না’’। (কাসাস: ৫৭)


২। সহীহ বুখারীতে ইবনুল মোসাইয়্যাব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন আবু তালিবের মৃত্যু ঘনিয়ে এলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে আসলেন। আবদুল্লাহ বিন আবি উমাইয়্যাহ এবং আবু জাহল আবু তালিবের পাশেই উপস্থিত ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘চাচা, আপনি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন। এ কালিমা দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য কথা বলবো, তখন তারা দু’জন [আবদুল্লাহ ও আবু জাহল] তাকে বললো, ‘তুমি আবদুল মোত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করবে?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কলেমা পড়ার কথা আরেকবার বললেন। তারা দু’জন আবু


তালিবের উদ্দেশ্যে পূর্বোক্ত কথা আরেকবার বললো। আবু তালিবের সর্বশেষ অবস্থা ছিল এই যে, সে আবদুল মোত্তালিবের ধর্মের উপরই অটল ছিলো এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে অস্বীকার করেছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আপনার ব্যাপারে যতক্ষন পর্যন্ত আমাকে নিষেধ করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকবো।’ এরপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন,


مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ (التوبة :113)


‘‘মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা নবী এবং ইমানদার ব্যক্তিদের জন্য শোভনীয় কাজ নয়।’’ (তাওবা: ১১৩)


আল্লাহ তাআলা আবু তালিবের ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল করেন,


إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ (ألقصص: 56)


‘‘আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে হেদায়াত করতে পারবেন না। কিন্তু আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়াত করেন।’’ (আল-কাসাস: ৫৬)


এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়ঃ 


১। أنكلامنأحببت এ আয়াতের তাফসীর।


২। সুরা তাওবার ১১৩ নং আয়াত অর্থাৎ


مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ


এর তাফসীর।


৩। قللاإلهإلاالله অর্থাৎ ‘‘আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার ব্যাখ্যা। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা এক শ্রেণীর তথা কথিত জ্ঞানের দাবীদারদের বিপরীত।


৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুপথ যাত্রী আবু তালিবের ঘরে প্রবেশ করে যখন বললেন, চাচা, আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন, এ কথার দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কি উদ্দেশ্য ছিল তা আবু জাহল এবং তার সঙ্গীরা বুঝতে পেরেছিল। আল্লাহ আবু জাহেলের ভাগ্য মন্দ করলেন, সে নিজেও পথভ্রষ্ট থেকে গেলো, অপরকেও গোমরাহীর পরামর্শ দিলো। আল্লাহর চেয়ে ইসলামের মূলনীতি সম্পর্কে আর কে বেশী জানে?


৫। আপন চাচার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তীব্র আকাংখ্যা ও প্রাণপন চেষ্টা।


৬। যারা আবদুল মোত্তালিব এবং তার পূর্বসূরীদেরকে মুসলিম হওয়ার দাবী করে, তাদের দাবী খন্ডন।


৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা আবু তালেবের জন্য মাগফিরাত চাইলেও তার গুনাহ মাফ হয়নি, বরং তার মাগফিরাত চাওয়ার ব্যাপারে নিষেধজ্ঞা এসেছে।


৮। মানুষের উপর খারাপ লোকদের ক্ষতিকর প্রভাব।


৯। পূর্ব পুরুষ এবং পীর-বুজুর্গের প্রতি অন্ধ ভক্তির কুফল।


১০। আবু জাহল কর্তৃক পূর্ব পুরুষদের প্রতি অন্ধ ভক্তির যুক্তি প্রদর্শনের কারণে বাতিল পন্থীর অন্তরে সংশয়।


১১। সর্বশেষ আমলের শুভাশুভ পরিণতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ। কেননা আবু তালিব যদি শেষ মুহুর্তেও কালিমা পড়তো, তাহলে তার বিরাট উপকার হতো।


১২। গোমরাহীতে নিমজ্জিত লোকদের অন্তরে এ সংশয়ের মধ্যে বিরাট চিন্তার বিষয় নিহিত আছে। কেননা উক্ত ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমান আনার কথা বারবার বলার পরও তারা [কাফির মুশরিকরা] তাদের পূর্ব পুরুষদের প্রতি অন্ধ অনুকরণ ও ভাল বাসাকেই যুক্তি হিসেবে পেশ করেছে। তাদের অন্তরে এর [গোমরাহীর তথা কথিত] সুস্পষ্টতা ও [তথা কথিত] শ্রেষ্ঠত্ব থাকার কারণেই অন্ধ অনুকরণকে যথেষ্ট বলে মনে করেছে।

















...

No comments

Powered by Blogger.